* উপকূল অতিক্রম করেছে গভীর নিম্নচাপ, জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
* নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় বসতঘরে কোমরসমান পানি
* ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে নোয়াখালী উপকূলের মানুষ, অধিকাংশ চরে নেই বাঁধ
* স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় ৩-৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন
* অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
* দিনভর বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে নগরবাসী
ভারী বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, পাবনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ভারী বৃষ্টিতে সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার অনেক নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। দিনব্যাপী বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সড়কের খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে বেড়েছে দুর্ভোগ। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষসহ নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। সাগরদ্বীপ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার পাশ দিয়ে নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। সাগর উত্তাল থাকায় দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতোই তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বস এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ছয় জেলা হচ্ছে ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোনা। ভারী বৃষ্টিতে সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার অনেক নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী দুদিন চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময় মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে ফেনী জেলার মুহুরী নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তী একদিন এসব নদীর পানি কমতে পারে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, খোয়াই, খলাই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময় নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী তিন দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আগামী দুই দিন বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি উচ্চতার জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে কমছে। তবে আগামী তিন দিন পর্যন্ত আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। পানি বাড়লেও তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি কমছে এবং তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলোর পানি আগামীকাল স্থিতিশীল থাকবে এবং পরবর্তী ৪ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে তা এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি বর্তমানে স্থিতিশীল, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীগুলোর পানি আগামী ৫ দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে; তবে তা বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস থাকায় সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে গাড়ির চাপ বেশি দেখা গেছে। এর মধ্যে দিনব্যাপী বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অনেক জায়গায় বৃষ্টির পানিতে সড়ক ডুবে থাকতে দেখা গেছে। মূল সড়ক ও বিভিন্ন অলিগলিতে পানি জমে থাকায় সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, টিটিপাড়া, গোপীবাগ, টিকাটুলী, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেন্ডারিয়া ও দয়াগঞ্জসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতায় বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার বাসিন্দা আহাদ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে রয়েছে। পানি চলাচলের স্বাভাবিক ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বৃষ্টি হলেই অলিগলিতে পানি জমে যায়। মানুষের চলাফেরাতে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। আগে তো ওয়ার্ড কমিশনারকে অভিযোগ জানাতাম। কিন্তু এখন সেই সুযোগও নেই।
সায়েদাবাদ সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে হৃদয় নামে এক ব্যক্তি বলেন, অফিসের জন্য সকাল ৯টায় বের হয়েছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় যানজটে পড়ি। এক ঘণ্টা পর অফিসের গিয়েছিলাম। এখন আবার সেই জলাবদ্ধতা সেই যানজট, অতিষ্ঠ লাগছে। বাসা থেকে ভালো পোশাক, ফরমাল ড্রেসে বেরিয়েছিলাম। এখন বৃষ্টি আর কাদাপানিতে সব কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কে জলাবদ্ধতা হওয়ায় বিপাকে পড়তে দেখা গেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষকে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই সব সময় নিউমার্কেট এলাকা তলিয়ে যায়। প্রতি বছর বর্ষাকালে এই সমস্যাটা হয়। অথচ সিটি করপোরেশন কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ নেয় না। এমনকি ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নতি করে না।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, সড়কের ওপরে এই মুহূর্তে যা আছে তা টানা বৃষ্টির ফলাফল। বৃষ্টি কমে গেলে আধা ঘণ্টার মধ্যে এই সমস্যা নিরসন হয়ে যাবে। তবে স্থায়ী যদি কোনও জায়গায় জলাবদ্ধতা হয় সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কুইক টিম সেই লোকেশনে গিয়ে তা নিরসন করবে।
ডিএসসিসির এই প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা আসন্ন কোরবানি ঈদকে উপলক্ষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিরসনে চারটি বিশেষ টিম তৈরি করেছি। যেটি জলাবদ্ধতা নিরসনেও কাজ করবে। আর নিউমার্কেটের যে জলাবদ্ধতা তা নিচু জায়গার কারণে হয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের বড় প্রকল্প রয়েছে। এ বছর নানা কারণে তা হয়নি। আগামী বছর বর্ষার আগেই আমরা এ নিয়ে পরিকল্পনা করবো।
গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নাগাদ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটাএ, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, পাবনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে পিরোজপুরের বলেশ্বর ও কচা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আশঙ্কায় রয়েছে নদী তীরের কয়েক লাখ মানুষ। পিরোজপুরের সাতটি উপজেলার প্রায় সবগুলোই নদীবেষ্টিত। তাই নদী তীরবর্তী বাসিন্দার সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। এখানে অধিকাংশ এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। ছোটখাটো ঘূর্ণিঝড় কিংবা নিম্নচাপে পানি উঠে যায় তাদের ঘরে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন বলেন, আমরা নদীর পাড়ের মানুষ। ঝড়-বন্যা এলেই ঘরে পানি ওঠে। সব ভাসাইয়া নিয়ে যায়। টেকসই বেড়িবাঁধ হলে আমরা বিপদমুক্ত হতে পারি।
ইন্দুরকানী উপজেলার মেহেদী হাসান বলেন, কচা নদীর তীরবর্তী এলাকায় হাজারো পরিবারের বসবাস। সাগরে নিম্নচাপ হলেই এ এলাকার মানুষের চিন্তা বাড়ে। রাত থেকে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে বাড়িঘরের আশপাশ তলিয়ে গেছে। এই পানি স্থায়ী হলে বড় ধরনের বিপদের শঙ্কা আছে।
এ বিষয়ে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন, আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং জরুরি খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা আছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী। বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জোয়ারের পানি, এতে আতংকে রয়েছে নদীতীরে বসবাসকারী মানুষ। কোমরসমান পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ, ভেসে গেছে ঘেরের মাছ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লঘুচাপের প্রভাবে গত বুধবার থেকেই জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে জোয়ার আসতে শুরু করলে দুপুর দেড়টার দিকেই তলিয়ে যায় চরফ্যাশন উপজেলার পূর্ব ঢালচর, চর নিজাম, মনপুরা উপজেলার কাজিরচর, দৌলতখান উপজেলার চর বৈরাগী, তজুমুদ্দিন উপজেলার চর জহিরউদ্দিনসহ অন্যন্ত অর্ধশতাধিক নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। এতে বসতঘরে কোমরসমান পানি ঢুকেছে গেছে।
এদিকে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানিয়েছন, ভোলায় ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১৪টি মাটির কিল্লা, ৬৯৩টি সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ইউনিট, ৯৮টি মেডিকেল টিম ও ২১টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, নগদ টাকা, চাল, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, গো খাদ্যসহ নানান প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র যখন উত্তাল, চারদিকে ঝড়-বৃষ্টির রুদ্ররূপ, তখনও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে চলছে উৎসবের আমেজ। প্রকৃতির সতর্কবার্তা যেন উপেক্ষার পাত্র হয়ে উঠেছে পর্যটকের কাছে। ঢেউয়ের তালে তালে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৈকতে মাইকিং করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও মহিপুর থানা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিম্নচাপের মধ্যেই সৈকতে ছিল পর্যটকদের উপস্থিতি। মাইকিং করে ট্যুরিস্ট পুলিশ একাধিকবার অনুরোধ জানালেও অধিকাংশ পর্যটকই তাতে কর্ণপাত করছেন না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবর্তা আর পুলিশের আহ্বান যেন বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে অতিরিক্ত জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে একজনের। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কুতুবজোমের ঘটিভাঙা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তির নাম দানু মিয়া (৪২)। দানু মিয়া ঘটিভাঙা এলাকার বাসিন্দা। তিনি মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে পরিবার।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ক্রমেই উপকূলের দিকে আসছে। উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় গত দুই দিন থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি ও বজ্রাঘাত হচ্ছে। লঘুচাপটি নিম্নচাপ হয়ে যেকোনও সময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে নোয়াখালীর হাতিয়াসহ দেশের উপকূলে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। এই খবরে দুশ্চিন্তায় আছেন উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ। গত বুধবার দুপুর থেকে বৈরী আবহাওয়া ও সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নিঝুম দ্বীপ।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, নোয়াখালীর উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নে মূল ভূখণ্ডের বাইরে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টির বেশি নতুন করে চর জেগেছে। নতুন করে জেগে ওঠা এসব চরের বেশ কিছু স্থানে মানুষজন বসবাস শুরু করেছে। এসব চরের মধ্যে চর গাসিয়ায় ১৫ হাজার, ঢাল চরে ৫ হাজার, নিঝুম দ্বীপে ৪০ হাজার, চর আতাউরে ৩ হাজার ও দমার চরে ১ হাজারের মতো মানুষ বসবাস করেন। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক হাতিয়ার ভাসান চরে বসবাসরত। এছাড়া, জাগলার চর, চর কবিরা, চর কামাল, চর গাঙ্গুরিয়া, ইসলাম চর, চর মোহাম্মদ আলী, চরজোনাক, চরগাঙ্গুরিয়া, চর নুরুল ইসলাম, চর প্রিয়া ও চরওছখালিসহ কয়েকটি চরে ধান চাষের পাশাপাশি রয়েছে গরু, মহিষ ও ভেড়ার পাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে নৌকা ও গাছে অবস্থান নিয়ে মানুষ রক্ষা পেলেও প্রাণহানি হয় পশুগুলোর। জোয়ারে অনেক গবাদিপশু ভেসে যায়। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় একাধিকবার ধান চাষ করলেও ফলন মিলে একবার। নতুন জেগে ওঠা এসব চরের একটিতেও নেই কোনও বেড়িবাঁধ। ফলে দুর্যোগের নাম শুনলেই আতঙ্কে থাকেন চরের মানুষ।
তবে নিম্নচাপের প্রভাবে পানি বেড়েছে সুন্দরবনে। স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় আড়াই থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন। গতকাল বৃহস্পতিবারে জোয়ারে সুন্দরবনের দুবলার চরে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সুন্দরবনের করমজলে পানি বেড়েছে ৩ ফুট। এতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে এতে বনের ও বন্যপ্রাণীর ক্ষতির তেমন কোন আশঙ্কা নেই। কারণ ভাটায় আবার এ পানি নেমে যাবে। এদিকে অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে মোংলার নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে পশুর ও মোংলা নদীর পাড়ের জয়মনি, চিলা, কলাতলা ও বুড়িরডাঙ্গা এলাকার নিচু এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
সুন্দরবন দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, গত বুধবার থেকেই সাগর প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে উঠেছে। বইছে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত। গতকাল বৃহস্পতিবারের জোয়ারে দুবলার চরের সুন্দরবনে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সুন্দরবনের মাছ ধরার জেলেরা নিরাপদে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
করমজল বন্যপ্রাণী ও পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, করমজলে স্বাভাবিকের তুলনায় আড়াই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পর্যটনকেন্দ্রের পায়ে হাঁটার পথ তলিয়ে গেছে। তলিয়েছে সুন্দরবনও। তবে পানি বাড়লেও এখানকার বন্যপ্রাণীর তেমন কোন ক্ষতি হবে না। কারণ ঘণ্টা দুয়েক পর পানি নেমে যাবে। আর বন্যপ্রাণীর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গা উঁচু টিলা করা রয়েছে। পানি বাড়লে বন্যপ্রাণীরা সেখানে আশ্রয় নিয়ে থাকে।
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নদীতে বিপদসংকুল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ওই নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত জারি হওয়ায় উপকূলীয় নৌপথসহ অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো উত্তাল রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী সাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী সব ধরনের নৌযানের চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ভারী বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা
- আপলোড সময় : ৩০-০৫-২০২৫ ০৭:১১:০৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৫-২০২৫ ০৭:১১:০৬ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ